মহামুনি এংলো-পালি উচ্চ বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার সন:- ১৯০২ ইংরেজী
...........................................................................................................
প্রতিষ্ঠাতা মন্ডলী ও প্রধান প্রতিষ্ঠাতা-
স্বর্গীয় গগন চন্দ্র বড়ুয়া
ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব স্কুল, রাঙ্গাঁমাটি।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য:
বাবু দক্ষিনা রঞ্জন মুৎসুদ্দী
ডিস্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ও প্রমূখ।
শিক্ষক:-
বাবু মোহন চন্দ্র বড়ুয়া
সেক্রেটারী-
বাবু অধর লাল বড়ুয়া-সাব রেজিষ্ট্রার
দাতা সদস্য:-
১। বাবু লায়ন রূপম কিশোর র
২। জনাব আলহাজ্ব মোঃ নাজিম উদ্দীন
৩। বেগম শামীম আক্তার
৪। জনাব মোঃ আবুল কালাম
৫। জনাব মোঃ এস.এম শফি
৬। জনাব মোঃ আসলাম চৌধুরী
৭। মিসেস জামিলা নাজনীল মাওলা
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
শিক্ষার্থীর সহজান গুণাবলী ও সামগ্রীক ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে তাদের ভাবীকালের সুনাগরিকে পরিণত করা। তাই এ মহান শিক্ষাংগনের উদ্দেশ্য হল মনন ও বুদ্ধি বৃত্তি বিকাশে অনুকল জীবনমুখী শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সমাজ জীবনে জ্ঞানের মূর্তিমান আদর্শ হিসেবে তৈরী ও প্রতিষ্ঠিত করা। সততা, নীতিবোধ, সমাজ চেতনা, হৃদয়, ধর্ম ও মানবতার চিরায়ত আদর্শের অনুস্মৃতি, এ বিদ্যায়তনের অভিপ্রেত আদর্শ। আমাদের জাতীয় জীবনে যা কিছু শ্রেয়, যা কিছু অনুকরণীয়, আমাদের জীবনে তাদের একনিষ্ঠ অনুবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বজাতি প্রীতি স্বদেশ প্রেম ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পৃথিবীর বৃহত্তর পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক এ মহান লক্ষ্য ও অত্র শিক্ষায়তনের উদ্দেশ্য।
মহামুনি এংলো-পালি উচ্চ বিদ্যালয়ের
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মহামুনি, পাহাড়তলী, রাউজান, চট্টগ্রাম।
সূচনা:
১৯০২ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে পাহাড়তলী মডেল স্কুলের প্রধান প-িত মহিমচন্দ্র গুহ মহোদয় ২৫ বৎসর চাকুরীর পর কার্য্য হইতে অবসর গ্রহণ সময়ে তাঁহার ছাত্রবৃন্দ তাঁহাকে বিদায় অভিনন্দন দেওয়ার জন্য এক সভা আহবান করেন। অভিনন্দন প্রদানের কার্য্য শেষ হইলে উক্ত সভায় পাহাড়তলী গ্রামে একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন বিষয়ে আলোচনা হয়। অবসর প্রাপ্ত পন্ডিত মহিমচন্দ্র গুহ মহাশয় ও হাই স্কুল স্থাপন বিষয়ে গ্রামবাসীদিগকে উৎসাহিত করেন। এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য ১৯০২ খৃষ্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর তারিখে পাহাড়তলী গ্রামবাসী বৌদ্ধগণ স্থানীয় মডেল স্কুল গৃহে এক সভায় সমবেত হন। হাই স্কুল স্থাপনের আবশ্যকতা ও উপযোগিতা সম্বন্ধে সবিশেষ আলোচনা হওয়ার পর সভায় সমবেত হন। হাই স্কুল স্থাপনের আবশ্যকতা ও উপযোগিতা সম্বন্ধে সবিশেষ আলোচনা হওয়ার পর সভায় ইহা স্থিরীকৃত হয় যে, পাহাড়তলী গ্রামে একটা উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন করা হউক এবং এই উপলক্ষে চাঁদা আদায় করা হউক এবং চাঁদা আদায়ের জন্য একখানি আবেদন পত্র সভার পক্ষে বাবু হরগোবিন্দ মুচ্ছদ্দী, বাবু জয়লাল বড়–য়া ও বাবু সতীশচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়গণের নামে ছাপান হউক। বাবু দক্ষিণারঞ্জন মুৎসুদ্দী মহাশয় স্কুল স্থাপন বিষয়ে সাতিশয় আগ্রহ প্রকাশ করেন। সভার পর দক্ষিণাবাবুর অনুরোধ মত বাবু অধরলাল বড়ুয়া, বাবু বীরেন্দ্রলাল মুচ্ছদ্দী মহাশয়ের দ্বারা একখানি আবেদন পত্রের মুসাবিদা করাইয়া তাহা দক্ষিণাবাবুর নিকট পাঠাইয়া দেন। বাবু দক্ষিণা রঞ্জন মুচ্চদ্দী মহাশয় আবেদন পত্র নোয়াখালী হইতে নিজ ব্যয়ে ছাপান।
সবিনয় নিবেদন-
মহাশয়,
আপনার অবিদিত নহে যে আমাদের মধ্যে ইংরেজী শিক্ষার্থী ও শিক্ষিতের সংখ্যা অতি অল্প। আর্থিক অস্বচ্ছলতা, উপযুক্ত বাসস্থান ও অভিভাবকের অভাবই ইহার প্রধান কারণ। এই সকল অন্তরায় দূরীভূত করিয়া শিক্ষা কার্য্য অল্প ব্যয় সাধ্য ও সর্ব্ববিধ সুবিধাকর করিবার জন্য পাহাড়তলী গ্রামে একটা উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন করিবর সংকল্প করা হইয়াছে। বলা বাহুল্য যে এই বিষয়ে কর্তব্য নিদ্ধারণের জন্য গত ৩০শে ডিসেম্বর একটা সভা আহুত হয়। তাহাতে স্থিরীকৃত হইয়াছে যে স্কুল গৃহ নির্মাণ ব্যয় শুধু স্থানীয় লোকের চাঁদার উপরই নির্ভর করিবে; এবং স্থানীয় লোক ও অন্যান্য মহদাশয় ব্যক্তিগণের বদান্যতার উপর নির্ভর করিয়া অপরাপর খরচের জন্য স্কুল ফাণ্ড খোলা হইবে।
চাঁদার সংগৃহীত টাকা স্কুল সাব্ ইন্পেক্টর বাবু গগন চন্দ্র বড়ুয়া নামে ফান্ডের পক্ষে সেভিং ব্যাঙ্কে জমা থাকিবে। গৃহ নির্মাণের জন্য ১০০০/-(এক হাজার) টাকা ইষ্টিমেট করা হইয়াছে। এস্থলে বল অনাবশ্যক যে আপনার বদান্যতা ও স্বজাতি বাৎসল্যের উপর নির্ভর করিয়াই আমরা এই দূরূহ ব্রতে হস্তক্ষেপ করিয়াছি। এ ব্রত একের পক্ষে দুরুহ হইলেও আমাদের সমবেত শক্তির নিকট যে ইহা সহজ সাধ্য তাহা আপনার ন্যায় বিজ্ঞ ব্যক্তিকে না বলিলেও চলে। অতএব বিনীত প্রার্থনা যে,আপনি এই শুভ কার্য্যরে জন্য আপনার দেয় চাঁদা শ্রীযুক্ত বাবু দক্ষিণারঞ্জন মুচ্ছদ্দী পোঃ আঃ লক্ষীপুর,জেলা ঃ নোয়খালী,এই ঠিকানায় প্রেরণ করিয়া সর্ব্বসাধারণের উপকার করিবেন। সন ১৯০৩, ১লা জানুয়ারী।
ইতি
শ্রী হরগোবিন্দ মুচ্ছদ্দী
শ্রীজয়লাল বড়ুয়া
শ্রী সতীশচন্দ্র বড়ুয়া
দক্ষিণা বাবু উক্ত আবেদন পত্র ছাপাইয় নোয়াখালী হইতে চট্টগ্রাম শহরে মোক্তার বাবু সতীশচন্দ্র বড়–য়া মহাশয়ের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। চাঁদা আদায়ের কোন চেষ্টা হইল না এবং কোন চাঁদা আদায় ও হইল না। ছাপান পত্র শহরে সতীশ বাবুর বাসায় পড়িয়া রহিল। এইভাবে প্রায় এক বৎসর কাটিয়া গেল। স্কুল স্থাপন বিষয় আলোচনা বদ্ধ হইল। গ্রামবাসীগণের হৃদয়ের উৎসাহ নৈরাশ্যের অন্ধকারে ডুবিয়া গেল।এরূপভাবে অধিক দিন চলিলে বোধ হয় আমরা আজও পাহাড়তলী গ্রামে উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় দেখিতে পাইতাম না। কিন্তু পাহাড়তলী গ্রামের ভাগ্য অন্যরুপ লিখিত ছিল। কাজেই সে অবস্থার পরিবর্তন হইল।
কার্য্যারম্ভ:
১৯০৩ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে পরলোকগত মহাত্না বাবু গগনচন্দ্র বড়ুয়া পার্বত্য চট্টগ্রামস্থ সমূহের ডেপুটি ইন্সপেক্টর মহোদয় পাহারতলী গ্রামে হাইস্কুল স্থাপনের কার্য্য স্বহস্তে গ্রহন করেন। তাঁহার আহবানে গ্রামস্থ উচ্চ শিক্ষানুরাগী যুবকবৃন্দ ও উদার হৃদয় ভদ্রমহোদয়গণ তাঁহার সাহায্যোর্থে বদ্ধ পরিকর হন। তখন হইতেই চাঁদা আদায় কার্য্য আরম্ভ হইল।গগনবাবু নিজে পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম হইতে চাঁদা আদায় করিতে লাগিলেন।মং সার্কেলের মাননীয় রাজা নিপ্র“চাই বাহাদুরের শুভ পুন্যাহ উপলক্ষে তিনি৩০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন । বন্ধোপলক্ষে যখন গগন বাবু বাড়ী আসিতেন তখন পাহাড়তলী গ্রামবাসীগণ হইতে চাঁদা আদায় করিতেন। এরুপ ভাবে পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ও চর্তুপার্শ্ব গ্রাম হইতে প্রায় ১০০০(এক হাজার টাকা)সংগৃহীত হয়। পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম হইতে চাঁদা আদায় কার্য্যে বাবু কালীকিষ্কর মুচ্ছদ্দী বাবু ভগীরথ চন্দ্র বড়–য়াও বাবু গোবিন্দ চন্দ্র বড়ুয়া পন্ডিত মহাশয়গণ গগন বাবুর সাহায্যে করেন। অতঃপর স্কুল গৃহ কোথায় নির্মিত হইবে তাহা আলোচিত হইতে লাগিল।কেহ কেহ শ্রীমন্ত সরকারের দীঘিরপার মনোনীত করিলেন। কিন্তু তাহা পাওয়া অসাধ্য হইল। গগন বাবুর পিতা বাবু জয়লাল বড়–য়া মহাশয় তাঁহার হাটের সংলগ্নীয় পুকুরের পার স্কুলের জন্যদান করিতে স্বীকৃত হইলেন এবং স্কু স্থাপন কর্ত্তাগণ এই প্রস্তাবে রাজী হইয়া উক্ত পুস্করিণীর দক্ষিণ পারে ৬৬ হাত দীর্ঘ ও ১৬ হাত প্রস্থ কোঠা ঘরের প্রস্তুত কার্য্য আরম্ভ করিয়া দিলেন। গৃহ প্রস্তুতের কার্য্য তত্ত্বাবধানের ভার বাবু জয়লাল বড়ুয়া ও বাবু সতীশচন্দ্র বড়–য়া মহোদয়গণের হস্তে অর্পণ করা হয। স্কুল গৃহ নির্মাণের কার্য্য নিয়মিত রূপে চলিতে থাকে। বাবু জয়লাল বড়ুয়া মহাশয় সর্বদা উপস্থিত থাকিয়া কার্য্য পরিদর্শন করিতেন। স্কুল বোর্ডিয়ের জন্য একখানি বাঁশের ঘর নিমিত হইল। বড় কোটা ঘরের দেওয়াল উঠিল ও টিনের ছানি দেওয়া হইল কিন্তু অর্থাভাবে জানালা দরজা ও ছাদ ইত্যাদি দেওয়া বাকী রহিল।
শ্রেণী অর্থাৎ স্থানীয় পাহাড়তলী মডেল স্কুলকে নুতন প্রস্তুতি গৃহে স্থানান্তারিত করিয়া তথায় আর একটা শ্রেণী অর্থাৎ হাই স্কুলের ৭ম শ্রেণী খোলার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু মডেল স্কুলের পক্ষে বাবু হরগোবিন্দ মুচ্ছদ্দি মহাশয় এই প্রস্তাবে আপত্তি করেন। তিনি বলেন হাইস্কুল হয় কিনা ঠিক নাই এমতাবস্থায় যদি মডেল স্কুলটা তথায় স্থানান্তরিত করা হয় তবে হাইস্কুল আরম্ভের কার্য্য কিছুদিনের জন্য স্থগিত রহিল। ইতিমধ্যে বাবু গগন চন্দ্র ববড়ুয়া, বাবু অধরলাল বড়ুয়া, বাবু সৌরিন্দ্র মোহন মুচ্চদ্দী, বাবু মোহনচন্দ্র বড়ুয়া নতুন স্কুলের জন্য ছাত্র সংগ্রহের চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
স্কুলের ১ম বর্ষ
১৯০৫ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বাবু মোহনচন্দ্র বড়ুয়া রাঙ্গুনীয়া নিবাসী শ্রীমান যতীন্দ্রলাল বড়ুয়া নামক জনৈক ছাত্রকে লইয়া স্কুলের কাজ আরম্ভ করিয়া দিলেন। বড় কোঠা গৃহ সম্পূর্ণ তৈয়ার না হওয়ায় বাঁশের নির্মিত বোডিং গৃহে স্কুলের কাজ আরম্ভ করা হইয়াছিল। যতীন্দ্র মধ্য ইংরেজী পাশ করিয়াছিল। কাজেই তাহাকে নিয়া তৎকালীন ৪র্থ শ্রেণী বা এখানকার ৭ম শ্রেণী খোলা হইল। কিয়দ্দিবসের মধ্যেই রাঙ্গুনীয়া নিবাসী শ্রীমান ধর্মরাজ বড়ুয়া, বেতাগী নিবাসী শ্রীমান দ্রোনকুমার বড়ুয়া, সাতবাড়িয়া নিবাসী শ্রীমান যোগেন্দ্রলাল বড়ুয়া, জোয়ারা নিবাসী শ্রীমান জয়রাজ বড়–য়া, কোয়েপাড়া নিবাসী শ্রীমান গুনেন্দ্রকুমার সেন ও পাহাড়তলী নিবাসী শ্রীমান মোহিতকুমার বড়ুয়া ঐ শ্রেণীতে ভর্তি হইল। ইহা ছাড়া তখন স্কুলে অন্য কোন শ্রেণী বা ছাত্র ছিল না। বেতাগী নিবাসী জমিদার হেদায়েত আলী চৌধুরী ও মোহন বাবুর চেষ্টায় বেতাগী মকতবের শিক্ষক মৌলবী আমির আলী তাঁহার ছাত্রগণ সহ ১৯০৫ খৃষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে এই স্কুলে যোগদান করেন। মৌলবী মহাশয়ের ছাত্রগণকে লইয়া শিশু শ্রেণী গঠন করা হয়। এই সময়ে পাহাড়তলী মডেল স্কুল হইতেও ছাত্র আনিবর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা আরম্ভ হইল। ঐ দিকে মডেল স্কুল রক্ষাকারীগণের পক্ষেও ছাত্র রাখার চেষ্টা হইতে লাগিল। এমতাবস্থায় পাহাড়তলী গ্রামের ছাত্রগণের অভিভাবকদের মনে দ্বিধাভাব উপস্থিত হইল। কিন্তু শীঘ্রই সেই দ্বিধাভাব দূরীভূত হয়। পাহাড়তলীর কয়েকজন অভিভাবক তাঁহাদের ছাত্রদিগকে মডেল স্কুল হইতে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট লইয়া হাইস্কুলে ভর্তি করাইয়া দিলেন। ইহা দেখিয়া অন্যান্য অভিভাবকগণও তাহাদের ছাত্রদিগকে হাইস্কুল পাঠাইতে লাগিলেন। এরূপভাবে মডেল স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র হাইস্কুলে গিয়া ভর্তি হইল। এই সময়ে রাঙ্গুনীয়া নিবাসী বাবু রোহিনীরঞ্জন মুচ্চদ্দীকে স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। তিনিও ছাত্র সংগ্রহে যথেষ্ট সাহায্য করেন, স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ক্রমশঃ বাড়িতে লাগিল। উপরে ৭ম শ্রেণী হইতে নিুে শিশু শ্রেণী পর্য্যন্ত সমস্ত শ্রেণী গঠন করা হইল। উপযুক্ত শিক্ষকগণ নিযুক্ত করা হইল। স্কুলের কার্য্য তত্ত্বাবধানের জন্য গগণবাবু তাঁহার সহকর্মীদের সহিত পরামর্শ করিয়া বাবু অধর লাল বড়ুয়া মহাশয়কে সম্পাদক নিযুক্ত করেন। বড় কোঠা ঘরটা অর্থাভাবে সম্পূর্ণ তৈয়ার না হওয়ায় স্কুলের কার্য্যে অসুবিধা হইতেছিল। এই সময়ে পূাজর বন্ধে বাবু অধরলাল বড়ুয়া ও বাবু মোহনচন্দ্র বড়ুয়া স্কুলের ছাত্র শ্রীমান দ্রোনকুমার ও মোহিত কুমার সহ পটিয়া থানার এলাকায় চাঁদা সংগ্রহ করেন। গগণবাবুও স্বয়ং চাঁদা সংগ্রহ কার্য্যে ব্যাপৃত ছিলেন। এই সময়ে সংগৃহীত প্রায় ২৫০ টাকার দ্বারা কোটা ঘরের অসম্পূর্ণ কার্য্য এক প্রকার শেষ করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে বাঁশের ছাদ দেওয়া হইল না। এই সময়ে ছেলেদের বসিবার টুল পর্যন্ত ছিল না। বাঁশের দ্বারা বসিবার স্থান তৈয়ার করিয়া লওয়া হইয়াছিল। শিক্ষকগণের বসিবার জন্য বাবু হরকিশোর বড়ুয়া কয়েকখানি চেয়ার দিয়াছিলেন। চাঁদা সংগ্রহ কার্য্যে ও হরকিশোর বাবু যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছিলেন। এইরূপ ভাবে অসুবিধার সহিত যুদ্ধ করিতে করিতে স্কুলের ১ম বর্ষ কাটিয়া গেল।
১৯০৬ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে ৮ম শ্রেণী খোলা হইল। কোয়েপাড়া নিবাসী বাবু রমণীরঞ্জন সেন মহাশয়কে হেডমাষ্টার নিযুক্ত করা হইল। তৎপর ক্রমশঃ বাবু অনন্তকুমার বড়ুয়া পালিশিক্ষক, বাবু প্রসন্নকুমার দেব সরকারী শিক্ষক নিযুক্ত হন। ইহাতে শিক্ষাকার্য্যরে সুবিধা না হওয়ায় এবং অর্থাভাবে অতিরিক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করিতে না পারায় শ্রীযুত অধর লাল বড়ুয়া, শ্রীযুত সৌরিন্দ্র মোহন মুচ্ছদ্দ্রি, বেণীমাধব বড়ুয়া, শ্রীযুত হরিজীবন সেন ও শ্রীযুত মুণীন্দ কুমার দাশ প্রত্যেকেই ক্রমাগত কয়েকমাস ধরিয়া বিনা বেতনে স্কুলের শিক্ষকতা কার্য্য করেন। স্কুলের এই দুঃসময়ে তাহাদের এই সাহায্য স্কুলের পক্ষে অমূল্য। উপরোক্ত ভদ্রমহোদয়গন স্ব স্ব কার্য্যস্থলে চলিয়া গেলে কোয়েপাড়ার বাবু সুরেন্দ্র নাথ সেনকে হেড মাষ্টারের পদে, বাবু কালীকুমার চক্রবর্ত্তী মহাশয়কে সংস্কৃত শিক্ষকের পদে ও কালীকুমার চৌধুরী মহাশয়কে বাঙ্গলা, ড্রিল ও ড্রয়িং শিক্ষকের পদে নিযুক্ত করা হয়। তৎপরে বাবু শশীকুমার সেন ও বাবু মতিলাল বড়ুয়াকে সহকারী শিক্ষকের পদে নিযুক্ত করা হয়।বলা বাহুল্য এসব শিক্ষক অতি অল্প বেতনেই নিযুক্ত করা হইয়াছিল । কিন্তু তথাপিও তাঁহারা স্কুলের উন্নতির জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করিতেছিলেন। অধর বাবুর পরামর্শ ও উৎসাহে মোহন বাবুও শিক্ষকগণের কঠোর পরিশ্রমে ,গগন বাবুর পরিচালনায়,স্কুল দিন দিন উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে লাগিল। কিয়দ্দিবস পরেই বাবু সুরেন্দ্রে নাথ সেন পদত্যাগ করিয়া রেঙ্গুন চলিয়া যান। স্কুলের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিলনা। কাজেই উপযুক্ত লোক কেহই স্বল্প বেতনে হেডমাষ্টারের কাজ করিতে রাজী হইলেন না। এই সময়ে স্কুলের সম্পাদক বাবু অধর লার বড়ুয়া , তাঁহারওকালতী ক্লাসের সহপাঠী বাবু মহিমচন্দ্র চৌধুরী মহাশয়কে অনেক অনুরোধ করিয়া হেডমাষ্টারের পদ গ্রহণে সম্মত করান। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে বাবু মহিমচন্দ্র চৌধুরী এই স্কুলে পদার্পন করেন। মহিম বাবু অতি শুভক্ষণে এই দিন বিদ্যালয়ে পর্দাপণ করিয়াছিলেন। তাঁহার মত সুনীতিপরায়ন,কার্যদক্ষ ও উন্নতমনা যুবকের সাহায্য এমনি সময়ে পাওয়া না গেলে স্কুলের বাল্যকাল নিরাপদেও এত শীঘ্র কৈশোরে উপনীত হইতে কিনা সন্দেহ ছিল। তিনি ছাত্র ও অভিভাবক উভয়েরই ভক্তি ও ভালবাসা আকর্ষণ করিতে পারিয়াছিলেন।এই সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রগণ মধ্য ইংরেজী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুব উদ্বিগ্ন হইলে সম্পাদক অধর বাবু এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণী পর্য্যন্ত মধ্য ইংরেজী স্কুলরূপে লিষ্টিভুক্ত করিবার জন্য স্কুল সমূহের ডেপুটী ইনসপেক্টার মহোদয়ের নিকট আবেদন করেন। কিন্তু উক্ত ডেপুটী ইনসপেক্টর মহোদয় উত্তরে জানান যে এই স্কুল পাহাড়তলী মডেল স্কুলের অতি নিকটবর্ত্তীও ঐ স্কুলের অনিষ্ট করিতেছে বলিয়া তিনি ইহাকে মধ্য ইংরেজী স্কুলরুপে লিষ্টিভুক্ত করিতে পারেন। ইহাতে অনেক ছাত্র স্কুল ছাড়িয়া যাওয়ার উপক্রম করে। কিন্তু অধর বাবু,মহিম বাবুও মোহন বাবুর সমবেত চেষ্টায় ছাত্রগণ এই স্কুল ছাড়িয়া যাইবার ইচ্ছা ত্যাগ করে। এই সময়ে শিক্ষকগণকে নিয়মিত বেতন দেওয়াও কুলাইত না। স্কুল গৃহের অসম্পূর্ণ কার্য্য সমাপন ও সরঞ্জামাদি খরিদের জন্যও টাকার আবশ্যক। গগন বাবু পাহাড়তলী, কোয়েপাড়া, পাঁচখাইন, বাগোয়ান দেওয়ানপুর, গর্চ্ছি, ঊনসত্তরপাড়া ও পোমরা ইত্যাদি গ্রাম হইতে আরও চাঁদা আদায় করিতে লাগিলেন এবং প্রায় ৫০০ টাকা তখন সংগৃহীত হয়। ইহা দ্বারা কোঠাঘরের জানালা দরজার কবাটও স্কুলের সরঞ্জামাদি কিছু কিছু খরিদ করা হয়। এরূপ ভাবে স্কুল জীবনের আর একটা বৎসর কাটিয়া গেল।
৩য় বর্ষ
১৯০৭ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে স্কুলের ৯ ম শ্রেনী খোলা হয়। তখন আর একজন শিক্ষকের দরকার হওয়ায় বাবু রামকমল দাস মহাশয়কে হেডমাষ্টারের পদে নিযুক্ত করা হয়। স্কুলের আর্থিক অসচ্ছলতা হেতু নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় তিনি কিছুদিন পরে পদত্যাগ করিয়া চলিয়া যান । এই বৎসর ফের্রুয়ারী মাসে বাবু অধরলাল বড়ুয়া সাবরেজিষ্ট্রার নিযুক্ত হওয়ায় তিনি কার্য্যস্থলে চলিয়া যান। তৎস্থলে কোয়েপড়া নিবাসী বাবু রমেশ চন্দ্র সেন বি,এল,মহাশয় সম্পাদক নিযুক্ত হন। কিছুদিন পরে তিনিও পদত্যাগ করেন। তৎপর বাবু জয়লাল বড়ুয়া মহাশয় সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। রামকমল বাবু পদত্যাগ করিয়া যাওয়ায় ও আর্থিক অসচ্ছলতা হেতু অন্য শিক্ষক নিযুক্ত করিতে না পারায় বাধ্য হইয়া ৯ম শ্রেণী ডিসমিস করিতে হইল। ইহাতে ছাত্রদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটিল। অনেকে স্কুল ছাড়িয়া যাওয়ার উপক্রম করিল। কিন্তু শিক্ষক ও স্কুলের হিতৈষীগণের সমবেত চেষ্টায় স্কুলএ যাত্রা রক্ষা পাইল। ছাত্রগণ সাম্যভাব ধারণ করিল। বাবু নন্দলাল চক্রবর্তী মহাশয় এই সময়ে সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত হন।এই বৎসর পূজার বন্ধে গগন বাবুও অধর বাবু পরামর্শ করিয়া পাহাড়তলী গ্রামবাসী উপার্জ্জনশীল বৌদ্ধ ভদ্রমহোদয়গণের প্রত্যেকের উপর মাসিক চাঁদা নির্দ্ধারিত করিলেনও তদ্ধারা স্কুলের ব্যয় নির্ব্বাহ করিতে লাগিলেন। দুই বৎসর পর্যন্ত এই চাঁদা আদায় হইয়াছে এবং প্রায় ২০০ টাকা এই ভাবে সংগৃহীত হইয়াছিল। অধর বাবুএ সময়ে সম্পাদক না থাকিলেও প্রতি বন্ধে বাড়ী আসিয়া স্কুলের কার্য্যে যোগ দিতেন। এই বৎসরের শেষভাগে বাবু সুণীন্দ্র কুমার দাস স্কুলের শিক্ষকরুপে নিযুক্ত হন। তিনি স্কুলের কার্য্যে হাজির হইয়া স্কুলের উন্নতি বিষয়ে প্রাণপণ যতœ করিতে লাগিলেন। এসময়ে মোহন বাবু ছাত্রদের তত্ত্বাবধানের জন্য বোর্ডিংয়ে গিয়া বাস করিতে লাগিলেন এবং বোর্ডিয়ে বিনা বেতনে ছাত্রদিগকে পড়াইতে লাগিলেন। এরুপভাবে আর এক বৎসর কাটিয়া গেল।
৪র্থ বর্ষ
১৯০৮ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে আবার ৯ম শ্রেনী খোলা হয়। ঐ সনেই জানুয়ারী মাসে বাবু গিরীশচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়কে সহকারী শিক্ষকের পদে ও বাবু গোরিন্দ্রচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়কে পালি শিক্ষকের পদে নিযুক্ত করা হয়। গিরীশ বাবু নিয়োগকাল হইতেই শিক্ষা কার্য্য অপেক্ষা স্কুলের স্থায়িত্ব বিষয়ক কার্য্যে সবিশেষ মনোযোগী হইলেন। তিনি ও মোহনবাবু পরামর্শ করিয়া প্রত্যেক ঘরে ঘরে মুষ্টিভিক্ষার জন্য পাত্র দিলেন। পাহাড়তলী গ্রামের দক্ষিণে কুমার পাড়া হইতে উত্তরে মুসলমান পাড়া পর্য্যন্ত প্রত্যেক ঘরে ঘরে পাত্র দেওয়া হইয়াছিল। প্রতি রবিবার পাত্র হইতে চাউল সংগ্রহ করিয়া তাহা বিক্রয় করতঃ স্কুল ফান্ডে টাকা জমা দেওয়া হইত। গিরীশ বাবু,রেবতী বাবু,সৌরিন বাবু ও বেণী বাবু সহ চাঁদার জন্য বাহির হইয়া কর্ণফুলী নদীর উত্তর ক’লে কয়েকটি গ্রাম হই তে কতেক টাকা সংগ্রহ করিয়াছিলেন। বাবু মোহনচন্দ্র বড়–য়া ,বাবু রমনীরঞ্জন সেন ও বাবু ন্দলাল চক্রবর্ত্তী স্কুলের ছাত্র শ্রীমান কালীশঙ্কর সেন,সতীশচন্দ্র বড়–য়াও জয়রাজ বড়–য়া সহ এই সময়ে কিছু টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন। শিক্ষা কার্য্যরে সুবিধার জন্য পাঁচুরিয়া নিবাসী বাবু বিপিনচন্দ্র বড়–য়া মহাশয়কে হেড মাষ্টারের পদে নিযুক্ত করা হয়। এ পর্য্যন্ত চাঁদার সংগৃহীত টাকা সম্পূর্ণ খরচ হইয়া যাওয়ায় এবং স্কুলের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও নতুন স্কুল গৃহ নির্মাণের আবশ্যক হওয়ায় ব্রক্ষ্মদেশের দিকে চাঁদা সংগ্রহ করিতে যাওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। তৎমতে বাবু গিরীশচন্দ্র বড়–য়া ও বাবু মোহনচন্দ্র বড়ুয়া ১৯০৮ খৃষ্টাব্দের ৪ঠা মার্চ তারিখে চাঁদা সংগ্রহার্থে ব্রক্ষ্মদেশ যাত্রা করেন। পথে তাঁহারা রামুতে কিছুকাল অবস্থান করিয়াছিলেন। তথায় তাঁহারা তদানীন্তন পুলিশ সাব ইন্সপেক্টার বাবু উমেশচন্দ্র মুচ্ছদী মহাশয়ের সহায়তায় প্রায় ৩০০টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন। বলা বাহুল্য উমেশ বাবুর দ্বারাই এই টাকা সংগৃহীত হইয়াছিল। তথা হইতে তাঁহারা টেকনাফ গিয়া পুলিশ সাবইনন্সপেক্টর বাবু অন্নদাচরণ মুচ্ছদ্দী মহাশয়ের সহায়তায় প্রায় ৩০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন। বলা বাহুল্য উমেশ বাবুর দ্বারাই এই টাকা সংগৃহীত হইয়াছিল। তথা হইতে তাঁহারা টেকনাফ গিয়া পুলিশ সাবইন্সপেক্টর বাবু অন্নদাচরণ মুচ্চদ্দী মহাশয়ের সহায়তায় তথায় কিছু টাকা সংগ্রহ করেন। তথা হইতে তাঁহারা ভীষণ বন্য পশু সঙ্কুল গর্জ্জনীয়া ঢালা ও ভুছিদং এর ঢালা পার হইয়া আকিয়াব গিয়াছিলেন। তথা হইতেও প্রায় ৩৫০টাকা চাঁদা সংগৃহীত হইয়াছিল। সর্বমোট এ যাত্রা ৬৫০টাকা চাঁদা সংগ্রহ করিয়া তাঁহারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এই টাকা লইয়া আসার পর সকলের মনে নূতন আশা ও নূতন উৎসাহ জাগরিত হইল। শ্রীযুত বরদাচরণ বসু বি, এ মহাশয়কে ১৯০৮ খৃষ্টাব্দের ১৭ই জুন তারিখে ৫০টাকা বেতনে হেডমাষ্টার নিযুক্ত করা হয়। তিনি স্কুলে হাজির হওয়ার পর হইতে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে থাকে। স্কুল গৃহে স্থান সঙ্কুলন না হওয়ায় বড় কোঠা ঘরের পশ্চিম পার্শ্বে বাঁশের আর একখানি গৃহ নির্মাণ করা হয়। স্কুলের অবস্থা ভাল হইতেছে দেখিয়া বাবু হরগোবিন্দ মুচ্ছদ্দী মহাশয়ও এই সময় হইতে অন্তরের সহিত স্কুল কমিটির কার্য্যে যোগদান করিতে লাগিলেন। স্কুলের জন্য আরও টাকার আবশ্যক হওয়ায় রেঙ্গুনের দিকে চাঁদা আদায় করিতে যাওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। তম্মতে বাবু গিরীশচন্দ্র বড়–য়া ও বাবু মোহনচন্দ্র বড়–য়া নভেম্বর মাসের ২২তারিখে রেঙ্গুন যাত্রা করেন। রেঙ্গুন সহরে পৌছিয়া ২০দিন চাঁদা সংগ্রহের পর মোহনবাবু তথায় বর্মা গভর্ণমেন্টের অফিসে চাকুরী গ্রহণ করেন। গিরীশ বাবু চাঁদা সংগ্রহ কার্য্যে ব্যাপৃত রহিলেন। তিনি তথাকার বড়–য়া বৌদ্ধগণের সহায়তায় ৩০০টাকা চাঁদা সংগ্রহ করিয়া দেশে ফিরিয়াছিলেন। তথায় চাঁদা আদায় কার্য্যে বাবু জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরী, বাবু নগেন্দ্রচন্দ্র বড়ুয়া , বাবু ধীরেন্দ্রলাল বড়–য়া, বাবু পূর্ণচন্দ্র বড়–য়া মহাশয়গণ সবিশেষ সাহায্য করিয়াছিলেন। মোহন বাবুর চেষ্টায় রেঙ্গুন প্রবাসী বড়–য়া বৌদ্ধগণ মাসিক ১৫টাকা করিয়া কয়েকমাস স্কুলের জন্য চাঁদা প্রেরণ করিয়াছিলেন। এই সময়ে পেলিটুয়া প্রবাসী বড়–য়া বৌদ্ধগণও কিছুকাল মাসিক চাঁদা প্রেরণ করিয়াছিলেন। এরূপভাবে স্কুল জীবনের আর একটা বৎসর কাটিয়া গেল। স্কুল দিন দিন উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে লাগিল।
৫ম বর্ষ
১৯০৯ খৃষ্টাব্দের জানুযারী মাসে খোলা হয়। স্কুলের ছাত্র সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি হইয়াছিল। গগন বাবু অধিকতর উৎসাহে চাঁদা সংগ্রহ কার্য্য চালাইতে লাগিলেন এবং স্কুলের সর্ব্বপ্রকার অভাবাদি পূর্ণ করিতে লাগিলেন। স্কুলের অভ্যন্তরিণ শৃঙ্খলা বিধান ও শিক্ষাকার্য্য বাবু বরদাচরণ বসু হেডমাষ্টার মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত রূপে চলিতে লাগিল। এই সনের এপ্রিল মাসের স্কুলের সংলগ্ন একটি ক্যাং ও বৌদ্ধ ছাত্রাবাস নির্মাণের প্রস্তাব কমিটিতে গৃহীত হয় এবং শ্রীযুত অতুলচন্দ্র (প্রজ্ঞাতিষ্য ভিক্ষু) মহাশয়কে এই কার্য্যের জন্য চাঁদা আদায় করার ভার দেওয়া হয়। তিনি হিলট্র্যাক্ট হইতে এই কার্য্যের জন্য চাঁদা আদায় করেন। তাঁহার সংগৃহীত টাকা ও স্কুল ফান্ডে সংগৃহীত চাঁদার টাকার দ্বারা পুকুরের উত্তর পাড়ে ক্যাং ও ছাত্রাবাস নির্ম্মাণ করা হয়। শ্রীযুক্ত অতুলচন্দ্র ভিক্ষু মহাশয়কে স্কুলের মহাশয়কে স্কুলের পালি শিক্ষক নিযুক্ত করা হয় এবং তাঁহার জন্য ক্যাংয়ে থাকিবার বন্দোবস্ত করা হয়।
স্কুলের সকল অভাব অসুবিধা এক প্রকার দূরীভূত করিয়া গগন বাবু এবার স্কুল এফিলিয়েসন বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুর করার দিকে মনোযোগী হইলেন। এই জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট স্কুল কমিটি হইতে দরখাস্ত করা হইল। গগন বাবু কলিকাতা বৌদ্ধ ধম্মাঙ্কুর সভার সভাপতি শ্রীযুত কৃপাশরন মহাস্থবির ও সহকারী সভাপতি গুণালঙ্কার মহাস্থবির মহোদয়গণের নিকট এ বিষয়ে সাহায্য করিবার জন্য অনুরোধ করিয়া পত্র লিখেন। উক্ত মহাস্থবির মহোদয়গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেন্সেলার মাননীয় স্যার আশুতোষ মুখার্জি মহোদয়ের নিকট যাইয়া মহামুনি এংলো পালি বিদ্যালয়কে হাইস্কুলরূপে মঞ্জুর করার জন্য সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ করেন। মাননীয় স্যার আশুতোষ এইটি গরীব বড়ুয়া জাতির স্কুল বলিয়া বৌদ্ধ সমাজের কল্যাণ কল্পে ইহাকে হাইস্কুল রূপে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিষ্টিভুক্ত করেন। তাঁহার এই উদারতা ও অসীম দয়ার জন্য বৌদ্ধ সমাজ তাঁহার নিকট চিরঋণী থাকিবে। শ্রদ্ধা ভাজন কর্মবীর কৃপাশরণ মহাস্থবিরও পরলোকগত বহুমানাস্পদ গুণালঙ্কার মহাস্থবির মহোদয়গণের নিকটও স্কুল চিরকৃতজ্ঞ থাকিবে। তাঁহাদের ঐকান্তিক চেষ্টা ভিন্ন এই কার্য্য কখনও এত সহজে সম্পাদিত হইত না।
এই সময়ে একদিকে স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুর হওয়ার কার্য্য চলিতেছে অপরদিকে স্কুলের জনক গগনচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয় বিস্ফোটক রোগে আক্রান্ত। একদিকে স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুর হইল অপর দিকে মহাত্না গগনচন্দ্র কর্ম্মকাল শেষ হওয়ার ইহধাম হইতে প্রস্থান করিলেন। মৃত্যুর পূর্ব্বে বাকরোধ হওয়ায় তিনি কথা বলিতে পারিলেন না । পেন্সিল দিয়া কাগজে কিছু লিখিবার চেষ্টা করিতেছিলেন।সেই লেখাতে মহামুনি হাইস্কুল এই কথাটি পড়া যাইতে অপর অংশ অপাঠ্য ছিল। ইহাতে বুঝা যায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মহামুনি হাইস্কুল তাঁহার একমাত্র চিন্তা ও ধারনার বিষয়ীভূত ছিল। বড়ই পরিতাপের বিষয় স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুর হইয়াছে একথা তিনি স্বকর্ণে শুনিয়া যাইতে পারেন নাই। তাহার মৃত্যুর পরেই টেলিগ্রাম পাওয়া গিয়াছিল যে মহামুনি হাইস্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুর হইয়াছে।তাঁহার এজন্মের কার্য্যকাল শেষ হইয়াছে বলিয়া তিনি প্রস্থান করিয়াছেন। তিনি কার্য্যজীবন পবিত্র শিক্ষাবিভাগে কাটাইয়াছেন। শেষ জীবনে শিক্ষার চরম আদর্শ স্বগ্রামে প্রতিষ্ঠিত করিয়া অক্ষয়পুণ্য স য় করিয়া এবং কীর্তি রাখিয়া গিয়াছেন। তাঁহার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে কলিকতা গেজেটে শ্রীযুত অধরলাল বড়ুয়ার দক্ষিণ রাউজান সাবরেজিষ্টারী অফিসে বদলীর বিষয় অবগত হইয়া গগনবাবু তাঁহার নিকট পত্র লিখেন যে দক্ষিণ রাউজান(পোমরা)বদলী হওয়ায় তিনিই এখন স্কুলের সমস্ত কার্য্যাদি চালাইতে পারিবেন এবং তিনি স্কুলের সম্পূর্ণ ভার তাঁহার উপর দিয়া নিশ্চিত হইলেন। ইহার পরই তাঁহার এই উৎকট ব্যাধি হয় এবং অধর বাবু স্বগ্রামে পৌছিবার ৩ দিন পূর্ব্বেই তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। গগন বাবুর এই ভবিষ্যত বাণী সত্যে পরিণত হইয়াছে। স্কুল স্থাপন বিষয়ক আলোচনায় সময় হইতেই অধর বাবু স্কুলের কার্য্যের সহিত জড়িত। স্কুল স্থাপন কার্য্যে তিনি গগন বাবুর প্রধান সহায় ছিলেন। তিনি নিকটবর্ত্তী স্থানে চাকুরীতে আসায় স্কুলের কার্য্যাদি পরিদর্শন তাঁহার পক্ষে সুবিধাজনক হইল। গগন বাবুর মৃত্যুর পর ১৯০৯খৃষ্টাব্দের জুলাই মাস হইতে এপর্য্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে স্কুলের যাবতীয় কার্য্যাদি চালাইয়া আসিতেছেন।
এপর্যন্ত স্কুল কমিটির কোন লিপিবদ্ধ নিয়ম ছিলনা। ১৯০৯খৃষ্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর তারিখে স্কুলের সাধারণ সভায় নিন্মলিখিত নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়।
Extract from the proceedings of a General Meeting held on the 26th December 1909
Regulations.
1.The Institution shall always remain under the management of a regularly constituted Executive commiittee of 10 (ten)members of whom one will be elected as President one as Ssecretary and one as joint Secretary The teaching staff must be well represented in the Committee. 2.The committee shall ordinarily meet once a month. But on special and emergent cases it may meet twice or more in a month on the reqisition of the secretaries or of the member representing the teaching staff. 3.Four members of the managing committee shall constitute a quorum, and all questions shall be decided by a majority of the votes of the members present.The President or in his absence,any of the competent members present shall preside at all meetings of the committee and if the votes including that of the President are equally divided the president shall have a casting vote. 4.It shall be the duty of the managing committee to regulate the teaching staff to make provision for theirSalaries, Appointment, Promotions,Reduction,Supension or Dismissal,to prescribe forms for keeping accurate accounts of the income and expenditure and all other forms that may be necessary for the Institution save those that are prescribed by the Education Department to Make rules for the Boardings,Hostels,messes attached to the Institution and for the residence of students under proper discipline. On the whole the managing committee shall discuss on all matters regarding the good management of the Institution and their decision in all such matters shallbe final subject to appeal to the General Meeting. 5.There is a monastery(kyong)attached to the Institution,with a priest to impart moral and religious training to the pupils of the Institution.The committee shall make good provision for its management and up keep. 6.The managing committee shall have power to remove any member from the committee on his negligence to attend the committee,or to take interest in the execution of his office as a member or on other ressonable ground. (a)Provided that when more than three members are required to be removed from the committee at a time, general meeting shall be called. 7. On the wilful resignation or on the removal of any member,the committee shall have power to appoint any one eligible for member ship in the place. (a)Provided that when more than 5(five) members are to be appointed at a time,a General Meeting shall be called. 8. The following gentlemen are elected and appointed to be the members of the managing committee and are authorised to work under these regulations: 1. Babu joy Lal Barua, Hon. Secretary 2. Babu Adhar Lal Barua Hon Joint Secretary 3. Babu Hargobinda Mutsuddy. 4. Babu Kali Kinkar Mutsuddy 5. Babu Satish Chandra Barua 6. Babu Romesh Chandra Sen,BL 7. Babu Rajani Kanta sen, Pleader 8. Babu Barada Charan Bose, B.A Head Master 9. Babu Harkishore Baura 10. Bunsai MafazzalAhmed Chaudhury 9. Any modification, addition, alterationb or repeal to these regulations shall be made in a General Meeting of not less than 25(twenty five) members.
(Sd)
President
Certified that the above is a true copy of the proceedings of a General Meeting held on the 26th
December 1909
Suresh chandra Sen
Head Master
Mahamuni Anglo Pali Institution ,Chittagong.
এই বৎসর বাবু অধর লাল বড়ুয়া, বাবু সতীশচন্দ্র বড়ুয়া, বাবু গিরিশ চন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়গণ প্রত্যেকে পৃথকভাবে প্রায় ২০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন। পাহাড়তলী,কোয়েপাড়া ও বেতাগী গ্রামাদিতে বিবাহাপলক্ষে একটাকা করিয়া চাঁদা আদায় করার প্রথা প্রবর্ত্তিত করা হয়। এই বৎসরই স্কুল পূর্ণতা লাভ করে। এইভাবে স্কুল জীবনের পঞ্চম বর্ষ কাটিয়া গেল।
৬ষ্ট বর্ষ
১৯১০ খৃষ্টাব্দের প্রারম্ভে ছাত্র সংখ্যা আরও বাড়িল । সেই বৎসরই বড় কোঠাগরের পূর্ব্ব দিকে বাঁশের ঘরটি নির্মাণ করা হয়। স্কুল গৃহের সম্মুখে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় স্কুল ভিটা বড় করিবার জন্য স্কুলের সম্মুখের রাস্তাটিকে স্কুলের উঠান ভুক্ত করা হয় এবং রাস্তাটাকে দক্ষিণে সরাইয়া বাবু কালীকিষ্কর মুচ্ছদ্দী ও বাবু দক্ষিণারঞ্জন মুচ্ছদ্দীও তাঁহার ভ্রাতা মহাশয়গণের জমির উপর দিয়া দেওয়া হয়। তাঁহারা স্কুলের সুবিধাও হিতার্থে এই জমি বিনামূল্যে দান করিয়াছেন। এই বৎসরই স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ী ভাবে মঞ্জুর হয়।
১৯১১ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৯২৩খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অতঃপর প্রতি বৎসরের বিবরণী পৃথক লিখিতে হইলে অনেক দীর্ঘ হইয়া যায়,এই বলিয়া সংক্ষেপে গত কয়েক বৎসরের প্রধান বিষযগুলির উল্লেখ করা যাইতেছে। এই কয়েক বৎসরের মধ্যে স্কুল ভিটার পূর্ব পার্শ্বের স্কুল গৃহ হেডমাষ্টার মহাশয়ের বাসা গৃহ, হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রাবাস গৃহ ও বৌদ্ধ ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় গৃহ নির্মাণ করা হয় এই সময়ের মধ্যে ১৯১১খৃষ্টাব্দের ১৩ই আগষ্টহইতে১৯১৩ খৃষ্টাব্দের ২৫শে জুন পর্যন্ত বাবু জয়লাল বড়ুয়া কিছুদিনের জন্য অবসর গ্রহন করায় বাবু রেবতী রমণ বড়ুয়া মহাশয় সম্পাদকের কার্য করেন। বাবু সতীশচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়ের পরলোক গমনের পর বাবু মোহন চন্দ্র বড়ুয়া ১৯১২ খৃষ্টাব্দের ২৪ শে মার্চ তারিখে মেম্বার নিযুক্ত হন। তৎপূর্ব্বেই তিনি পুনরায় স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হইয়াছিলেন। বাবু হরগোবিন্দ মুচ্ছদ্দী মহাশয় মেম্বারের পদত্যাগ করিলে ১৯১৩ খৃষ্টাব্দের ২৯শে জুন তারিখে বাবু উমেশচন্দ্র মুৎসুদ্দী মহাশয় মেম্বার নিযুক্ত হন। ১৯১৫ খৃষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারী তারিখে বাবু মোহনচন্দ্র বড়–য়ার স্থলে বাবু মহিমা রঞ্জন বড়–য়া মহাশয়কে মেম্বার নিযুক্ত করা হয়। বাবু জয়লাল বড়ুয়া মহাশয় বার্ধক্য হেতু সম্পাদকের পদ ত্যাগ করিলে বাবু রেবতী রমন বড়ুয়া মহাশয় তৎপদে মেম্বার নিযুক্ত হন এবং ১৯১৭ খৃষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর তারিখে বাবু রেবতী রমন বড়ুয়া স্কুল কমিটির সভাপতি এবং বাবু অধর লাল বড়ুয়া সম্পাদক নিযুক্ত হন। বাবু হরকিশোর বড়ুয়া মেম্বারের পদত্যাগ করিলে তাঁহার স্থানে শিক্ষকের প্রতিনিধি একজনকে মেম্বার নিযুক্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে বাবু যামিনী কান্ত সেন শিক্ষক স্কুলের উন্নতি বিষয়ে যত করেন। বাবু কালীকিষ্কর মুৎসুদ্দী মহাশয়ের পরলোক গমনের পর বাবু গিরীশ চন্দ্র বড়ুয়া মেম্বার নিযুক্ত হন এবং বাবু রমেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের পরলোক গমনের পর বাবু ব্রজেন্দ্র লাল কানুনগো মহাশয় মেম্বার নিযুক্ত হন।
১৯১০খৃষ্টাব্দের পর হইতে স্কুল আতœনির্ভরশীল হইয়া চলিয়া আসিয়াছে। স্কুলে ছাত্রবেতন হইতে যে টাকা আদায় হইয়াছে তাহা হইতে শিক্ষকদের বেতন বাদ যাইয়া স্কুল ফান্ডে আরও কিছু টাকা জমিতে থাকে। ১৯২০খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে এই স্কুলের জন্য গভর্নমেন্ট হইতে মাসিক ৭৫ টাকা করিয়া সাহায্য মঞ্জুর হইয়াছে। ১৯২২খৃষ্টাব্দের মার্চ মাস হইতে এই সাহায্য ২৫ টাকা বর্ধিত হয়। বর্তমানে এই স্কুলে গভর্নমেন্ট হইতে মাসিক ১০০টাকা করিয়া সাহায্য পাওয়া যাইতেছে।স্কুল স্থাপনকাল হইতে এই স্কুলে ১৭০০জন ছাত্র ভর্তি হইয়াছে। ১৯২০খৃষ্টাব্দ হইতে ১৯২৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১৩৯ জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রীকুলেশন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হইয়াছে। বর্তমানে স্কুলের বার্ষিক আয়ও ব্যয় ৬০০০ টাকার কিছু বেশী। ছাত্র সংখ্যা হ্রাস হেতু আর পূর্ব্বাপেক্ষা কমিয়া গিয়াছে। স্কুল ফান্ডের টাকার দ্বারা ৩০০০ টাকা মূল্যের পোষ্টেল কেস সার্টিফিকেট খরিদ করা হইয়াছিল। তাহা আগামী নভেম্বর মাসে পূর্ণতা লাভ করিবে। এই টাকা সহ স্কুল ফান্ডে এপ্রিল মাসের শেষভাগে মোট ৪০৮৯ টাকা জমা আছে।
উপসংহার
মহামুনি হাইস্কুল স্থাপন কল্পে যাহারা কাজ করিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে বাবু গগনচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয় সর্বপ্রধান। ১৯০৩ খৃষ্টাব্দ হইতে১৯০৯ খৃষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুলের জন্য চাঁদা আদায় করিয়াছেন এবং স্কুলের সর্ব্ববিধ উন্নতি সাধনে প্রাণপণ যত করিয়াছেন। ইহা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে যে তিনি স্কুল স্থাপনের কার্য্যভার স্বহস্তেগ্রহণ না করিলে সেই সময়ে স্কুল স্থাপন অসম্ভব ছিল। তাঁহার কার্য্য তৎপরতা, সহিষ্ণুতা, অধ্যবসায় ও অমায়িকতা, সর্ব্বোপরি তাঁহার দেবোপম চরিত্র এই সাধু কার্যে সাফল্য আনয়ন করিয়াছে। সমাজ হিতার্থেরই তাঁহার ন্যায় মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়া থাকেন।
তৎপর বাবু অধর লাল বড়ুয়া মহাশয়ের নাম উল্লেখ যোগ্য। ১৯০৩ খৃষ্টাব্দ হইতে এ পর্যন্ত তিনি স্কুলের কার্যে ব্যাপৃত আছেন। চাঁদা আদায় সেক্রেটারী রূপে স্কুলের কার্যে তত্ত্বাবধান, ছাত্র সংগ্রহ, অবৈতনিক শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি সর্ব্ববিধ কার্য তিনি অতি যত ও কঠোর পরিশ্রমের সহিত সম্পাদন করিয়াছেন। ১৯০৫ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৯০৭ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সম্পাদক রূপে, ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের শেষ ভাগ হইতে ১৯১৬ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক রূপে, ১৯১৭ খৃষ্টাব্দ হইতে এ পর্যন্ত সম্পাদক রূপে তিনি স্কুলের অভ্যন্তরীন কার্যের শৃঙ্খলা বিধানে স্কুলকে বর্তমান আত নির্ভরশীল অবস্থায় উপস্থিত করিয়াছেন। তৎপরে বাবু জয়লাল বড়ুয়া মহাশয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি স্কুলের জন্য জমি দান করিয়াছেন। তিন বৃদ্ধ বয়সেও যুবকের ন্যায় উৎসাহের সহিত স্কুল গৃহ নির্মাণ কার্যের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৯১৭ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সম্পাদক রূপে স্কুলের অশেষ হিত সাধন করিয়াছেন। তৎপর বাবু হরকিশোর বড়ুয়া মহাশয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি চাঁদা আদায় কার্য ও স্কুল কমিটির মেম্বারের কার্য্য অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্পাদন করিয়াছেন। বাবু সতীশচন্দ্র বড়ুয়ার নাম তৎপর উল্লেখযোগ্য। তিনি চাঁদা আদায় কার্যে ও কমিটির মেম্বার রূপে স্কুলের যথেষ্ট উপকার সাধন করিয়াছেন। বাবু উমেশচন্দ্র মুচ্ছদ্দী মহাশয় চাঁদা আদায় ও স্কুল কমিটির মেম্বার রূপে স্কুলের অশেষ কল্যাণ সাধন করিয়াছেন। বাবু কালীকিঙ্কর মুচ্ছদ্দী, বাবু রেবতী রমন বড়ুয়া, বাবু রমেশ চন্দ্র সেন, বাবু মহিমা রঞ্জন বড়ুয়া, বাবু রজনী কান্ত সেন, মুন্সী মফজল আহমদ চৌধুরী ইহারা দীর্ঘকাল কমিটির মেম্বার রূপে স্কুলের নানাবিধ হিত সাধন করিয়াছেন। এই গেল অবৈতনিক কর্মীদিগের কথা। বেতনভোগী কর্মচারীদিগের মধ্যে মোহন চন্দ্র মহাশয়ের নাম সর্ব্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য। তিনি একজন মাত্র ছাত্র লইয়া স্কুলের কার্য আরম্ভ করিয়াছিলেন এবং স্কুলের জন্য চাঁদা আদায় ও স্কুলের সর্ববিধ উন্নতি সাধনে যথাসাধ্য যতœপর ছিলেন। তৎপর বাবু গিরিশচন্দ্র বড়ুয়া মহাশয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি বৃদ্ধ বয়সেও যুবকের ন্যায় বল ও সাহসের সহিত দেশের হিতসাধন করিয়াছেন ইহা অতীব প্রশংসনীয়। ইহার পর বাবু মহিমচন্দ্র চৌধুরী, বাবু মনীন্দ্র কুমার দাস, বাবু রমণী রঞ্জন সেন মহাশয়গণের নাম উল্লেখযোগ্য। ইহারা স্কুলের উন্নতি বিষয়ে সর্ব্ববিধ যতœ ও চেষ্টা অন্তরের সহিত করিয়াছেন। বাবু বরদা চরণ বসু ও বাবু সুরেশচন্দ্র সেন হেডমাষ্টার মহাশয়গণের নামও স্কুলের হিতৈষীরূপে উল্লেখযোগ্য । চাঁদা দাতাগণের মধ্যে মাননীয় রাজা নিপ্রুচাই মং রাজা বাহাদুরের নাম সর্ব্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য। পাহাড়তলী গ্রামস্থ মহামুনি মন্দির তাঁহারই পূর্ব পুরুষের কীর্তি। উক্ত মন্দিরে ভগবান বুদ্ধ দেবের মহামুনি নামক যে মূর্তি স্থাপিত আছে তাঁহারই নামানুসারে স্কুলের নাম মহামুনি এংলো পালি বিদ্যালয় রাখা হইয়াছে। উক্ত রাজা বাহাদুরের শুভ-পূণ্যাহে গগনবাবু সর্ব প্রথম চাঁদা সংগ্রহ কার্য্য আরম্ভ করেন। রাজা বাহাদূরের পূণ্যময় হস্তের শুভময় দান স্কুলের ভাগ্যচক্রে শুভ সূচিত করিয়া দিয়াছিল। পাহাড়তলী ও তৎচতুপার্শ্বস্থ কোয়েপাড়া, বেতাগী, পাঁচখাইন, বাগোয়ান, ঊনসত্তরপাড়া, দেওয়ানপুর ও পোমরা গ্রাম সমূহের অধিবাসীগণের এবং চট্টগ্রাম, পার্ব্বত্য চট্টগ্রামস্থ বৌদ্ধ অধিবাসীগণের ও ব্রহ্মদেশস্থ কতিপয় ভদ্র লোকের বদান্যতার উপর এই স্কুলের ভিত্তি স্থাপিত। তাঁহারা স্কুলের স্থাপন কল্পে নিস্বার্থভাবে অর্থদান না করিলে স্কুল স্থাপন কার্য্য অসম্ভব হইত। তৎপরে স্কুলে যে সব ছাত্র অধ্যয়ন করিয়াছে তাহাদের অভিভাবকবৃন্দ স্কুলের অন্যতম হিতৈষী। ১৯২৩ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের শেষে স্কুল ফান্ডে যে ৪০৯০ টাকা জমা আছে ইহা তাঁহাদেরই সম্পত্তি। ইহাতে চাঁদার টাকা নাই। ইহা কেবল ছাত্র বেতনেরই উদ্বৃত্ত টাকা। ইহা স্কুল পরিচালন কার্যে সম্পাদক বাবু অধরলাল বড়ুয়া মহাশয়ের মিতব্যয়িতার ফল। বিগত ২০শে মে তারিখে বিদ্যালয় কার্য নির্বাহ সমিতির অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবের মর্ম্ম অনুযায়ী এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রকাশিত হইল। উক্ত প্রস্তাব নিন্মে উদ্বৃত করা গেল।
12. Resolved that the History of the Mohamuni Anglo Pali Institution as cellected and recprded by the Managing Committee be passed as correct and true account of the School and be printed and published, 500copies to be printed.
Mahimaranjan Barua
President
20-5-23
Certified that the above is a true copy of Resolution No. 12 as passed in meeting of the Managing Commitee held on the 20th May, 1923.
Suresh Chandra Sen
Head Master
Mohamuni Anglo Pali Institution
Chittagong.
12-9-23
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মহামুনি এংলো পালি উচ্চ বিদ্যালয়
১৯২৪-২০০৪
১৯২৪ইং সনের আগষ্ট মাসে বাবু সুরেশ চন্দ্র সেন স্কুল ত্যাগ করলে বাবু কালী শংকর সেনগুপ্ত আবার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রসঙ্গতঃ ১৯২৩ ইং সনে ৫মাস সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু কালী শংকর সেনগুপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭ইং সনের আগষ্ট মাসে বাবু নরেন্দ্র নাথ রায়, বি.এ.বি-টিকে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। তিনি প্রায় ২বৎসর যাবৎ প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এরপর বাবু প্রকাশ চন্দ্র বল, বি-এ,বি-টি, প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনি ১/৭/২৯ইং তারিখে কাজে যোগদান করেন এবং দীর্ঘকাল প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৪সনে কমিটির নির্বাচনে রাউজান সার্কেল অফিসারকে সভাপতি, বাবু দক্ষিণা রঞ্জন মুৎসুদ্দীকে সহ-সভাপতি এবং বাবু উমেশ চন্দ্র মুৎসুদ্দীকে সেক্রেটারী নির্বাচিত করা হয়। ১৯২৭ ইং সনের নির্বাচনেও তাদেরকে স্ব স্ব পদে পুণরায় নির্বাচিত করা হয়। এই সময়ে জনাব মফজল আহম্মদ চৌধুরী অনেক বৎসর কাল কমিটির সদস্য ছিলেন। জনাব ফিরোজ আহম্মদ চৌধুরী সাহেবও দীর্ঘকাল কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৩৭ইং সনের মার্চ মাসে বাবু সুধাশু বিমল বড়ুয়া, বি-এ, বি-টি, প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং তিনি ৩৬বৎসর কাল স্কুলে হেডমাষ্টার হিসাবে ছিলেন। তাঁহার সময়ে বিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি হয়।
১৯৪৩-৪৪সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে জাপানী বিমান থেকে বোমা হামলা শুরু হলে দলে দলে লোক শহর ছেড়ে গ্রামে আসতে থাকে। ফলে শহরের অনেক ছাত্র-ছাত্রী মহামুনি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এর আগে বিদ্যালয়ে মাত্র তিন-চার জন ছাত্রী পড়াশুনা করতো। কিন্তু সে সময় ছাত্রীর সংখ্যা অনেকটা বেড়ে যায়। অবশ্য ১৯৪৫-৪৬’ এ যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শহর থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশ আবার শহরে ফিরে যায়। ১৯৪৬ইং সনের প্রলয়ংকরী বন্যায় ১২ইং জুলাই তারিখ মহামুনি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিমের দালান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। বিদ্যালয় গৃহের প্রায় তিন চতুর্থাংশ বিধ্বস্ত হওয়ায় বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নিয়ে দারুন সংকট দেখা দেয়। বিদ্যালয়ের তদানীন্তন সেক্রেটারী বাবু শচীন্দ্র নাথ মুৎসুদ্দী নিজ ভিটাস্থ তিনটি ঘর বিদ্যালয়ের ক্লাসের জন্য ছেড়ে দিতে রাজী হন।
বিদ্যালয়কে সাময়িকভাবে বাবু শচীন্দ্র নাথ মুৎসুদ্দির বাড়ীতে স্থানান্তরিত করা হয়। বাবু শচীন্দ্র নাথ মুৎসুদ্দী মূল ঘরের এক পার্শ্বে কষ্ট করে নিজ পরিবারের স্থান সংকুলান করেন। ১৯৪৭ এর জানুয়ারীতে ৯০ফুটদ্ধ১৫ফুট মাপের বারান্দাযুক্ত একটি বাঁশের ঘর নির্মিত হয় এবং তাতে স্কুলের পুরানো টিন লাগানো হয়। ফেব্রুুয়ারী মাসে স্কুল পূর্ব স্থানে নিয়ে আসা হয়।
১৯৪৭ইং সনের অক্টোবর মাসে বাবু অধরলাল বড়ুয়া মহাশয়কে সেক্রেটারী এবং বাবু রেবতী রমন বড়ুয়াকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। মোঃ ফিরোজ আহম্মদ চৌধুরীকে এসিষ্ট্যান্ট সেক্রেটারী নিযুক্ত করা হয়। ১৯৫১ এর মার্চ মাসে ডি-পি আই থেকে স্কুল বিল্ডিং এর জন্য ৯,৭১৬/-টাকা মঞ্জুর করা হয়। উক্ত টাকায় পশ্চিম পার্শ্বে ৫টি কক্ষ বিশিষ্ট পাকা স্কুলঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যয় নির্বাহের জন্য চাঁদা তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাকা করার কাজ শুরু করা হয়। এদিকে স্কুল সেক্রেটারী বাবু অধর লাল বড়–য়া, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে চিকিৎসার জন্য তাকে কলিকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। এতে বিদ্যালয়ের কাজের ব্যাঘাত হয়। তিনি চিকিৎসার পর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ফিরে আসেন এবং বিদ্যালয়ের কাজে যোগ দেন।
১৯৫২ এর প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষক বাবু মোহন চন্দ্র বড়ুয়া অবসর গ্রহণ করেন। এই সময়ে স্কুলের সামনে বাঁকানো খালকে পুণঃখনন দ্বারা সোজা করে নেওয়া হয় এবং পুরানো খালের বাঁকা অংশ ভরাট করে দিয়ে রাস্তা সোজা করা হয়। এই সনে কমিটির নির্বাচনে বাবু অধরলাল বড়ুয়াকে সেক্রেটারী এবং বাবু রেবতী রমন বড়ুয়াকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫৩ইং সনে ৫০,০০০ইট পোড়ানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তুু পরে ভাটিতে মোট এক লক্ষ ইট পোড়ানো হয়। মহামুনি মেলায় যাত্রাগান আনা হয় বিদ্যালয়ের উদ্যোগে। যাত্রাগান থেকে ৩,৮২৯/-টাকা লাভ হয়। একই সময়ে ১৫/১০/১৯৫৩ইং তারিখে স্কুলের সেক্রেটারী বাবু অধরলাল বড়ুয়া দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে মৃত্যু বরণ করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা থেকে তিনি বিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট খাটেন। জনাব ইদ্রিস আহম্মদ চৌধুরী তখন সেক্রেটারী নিযুক্ত করা হয়।
১৯৫৪ইং সনে স্কুলের হেডমাষ্টার বাবু সুধাংশু বিমল বড়ুয়া পার্লামেন্ট সদস্য পদে প্রার্থী হন এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এক মাস ছুটি নেন। নির্বাচনে তিনি বৌদ্ধ প্রতিনিধি হিসাবে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। বিদ্যালয় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
১৯৫৫সনে বিদ্যালয় গৃহের অসমাপ্ত পাকা কাজ সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১০০দ্ধ১৫ ফুট সাইজের টিনের ছাউনীযুক্ত পাকা ঘরের নির্মাণ কাজ এই বৎসরের শেষের দিকে শেষ করা হয়। ১৯৫৬ সনের মার্চে বাবু জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে সহ সভাপতি এবং মৌঃ ইদ্রিস আহাম্মদ চৌধুরীকে সেক্রেটারী নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬২ইং সনে বিদ্যালয়ের ৬০বৎসর পূর্তি উপলক্ষে ডায়মন্ড জুবলী উদ্যাপন করা হয়। ২দিন ব্যাপী আলোচনা সভা ও ৫দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। তদানীন্তন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু খগেন্দ্র লাল বড়ুয়া ৩১/৫/১৯৬৩ইং তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ইংসনের প্রথম দিকে বিজ্ঞান ভবন নির্মাণের জন্য অনুদান পাওয়া যায় এবং সেই টাকায় বর্তমান দ্বিতল ভবনের নীচের তলা নির্মাণ করা হয় এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়।
১৯৬৬ইং সনে জনাব নুরুল হক চৌধুরীকে সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য বাবু জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সনে বিজ্ঞান ভবনের উপরে দোতলা নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৭ইং সনে বিদ্যালয়ের পূর্ব পার্শ্বে সরকারী অনুদানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৮ইং প্রলয়ংকারী বন্যায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র, কাগজপত্র এবং কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির যথেষ্ট ক্ষতি হয়। সংস্কৃত পন্ডিত বাবু রেবতী রমন কর ৩১/১২/৬৯ ইং তারিখে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে দু®কৃতিকারীরা ল্যাবরেটরীর বেশ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। অনেক শিক্ষক দেশত্যাগ করে ভারতে যান। তারা সকলে বাংলাদেশ হওয়ার পর দেশে ফিরেন। প্রধান শিক্ষক বাবু সুধাংশু বিমল বড়ুয়া ২৮/২/৭৩ইং তারিখে অবসর গ্রহণ করেন।
১/৪/৭৩ইং তারিখে বাবু দীপক জ্যোতি মুৎসুদ্দীকে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করা হয় এবং বাবু নরেশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। ৬/১২/৭৩ইং তারিখ স্কুল ডাকাতি হয়। ডাকাতরা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
২৭/৫/৭৫ইং তারিখে স্কুলে পুনরায় ডাকাতি সংঘটিত হওয়ায় বিজ্ঞানাগারের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি খোয়ানো যায়। ১৯৮১সনের প্রথমে দ্বিতল ভবনের উত্তর পূর্বে দোতালায় অসমাপ্ত ১টি কক্ষের অবশিষ্ট গাথুনী (পূর্বে লিন্টার পর্যন্ত ছিল) সম্পন্ন করে ছাদ ঢালাই করা হয়। ১৫/৪/৮২ইং তারিখে এক ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয় গৃহের আধাপাকা ঘরের ৫টি কামরার টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে যায়। কাঠের ফ্রেম ও চালা পুনরায় লাগানো হয়। ১৯৮৪ সনের জুন মাসে বিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষক জনাব বক্তেয়ার উদ্দিন চৌধুরীর অকাল মৃত্যু হয়।
২৪/৫/৮৫ইং তারিখে কমিটির সহ-সভাপতি বাবু জ্যোতির্ম্ময় বড়ুয়া, বি-এ, বি-এল, পরলোক গমন করেন। তিনি বহু বৎসর কাল বিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহক কমিটিতে ছিলেন।
৭/৫/৮৭ইং তারিখের ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়ের পূর্বদিকে ৩টি কক্ষের চালা উড়িয়ে নিয়ে যায়। চালা মেরামত, দাশা-বাত্তি বদলানো এবং বাঁশের নীলের বেড়া লাগানো ইত্যাদিতে মোট খরচ হয় ৮,৫০০/-টাকা। ১৯৮৭এর রাস্তার পাশে স্কুলের জাযগায় ১টি পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়। ২৯/৪/৯১ইং তারিখে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে বারান্দা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় এবং ২টি কক্ষের চালা, দোকানঘরের চালা, কিছু জানালা, দরজা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মেরামতে খরচ ১৪,০০০টাকা।
১৯৯২ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায়, বিদ্যালয়ের সার্বিক তারিখে বেশ কিছু বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে সাড়ম্বরে অনুপম এক পুনর্মিলনী সংকলন ‘সতীর্থ’ প্রকাশ করা হয়। যার সম্পাদনায় ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতী ছাত্র, ব্যাংক কর্মকর্তা বাবু প্রণব মুৎসুদ্দী(পলু) এবং এ সংকলন প্রকাশনা উপ-পরিষদের আহবায়ক ছিলেন আরেক স্বনামধন্য প্রাক্তন ছাত্র বিশিষ্ট ব্যাংকার বাবু স্বপন কুমার বড়ুয়া। ঐ সময়ে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে প্রাপ্ত অনুদানের টাকায় বিদ্যালয়ের মূল তোরনের দু’পার্শ্বে উন্নয়নমূলক কাজ হিসেবে আংশিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয় এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পুরাতন জীর্ণ অডিটোরিয়ামকে ভেঙ্গে নূতন আংগীকে আরো বৃহৎ পরিসরে নির্মান করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জনাব নুরুল হক চৌধুরীকে সভাপতি এবং বাবু মানবেন্দ্র বড়ুয়াকে সহ-সভাপতি মনোনীত করতঃ ৮/১২/৯৩ই ং তারিখে তিন বছরের জন্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠন করা হয়। উল্লেখ্য যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সমাজসেবক অনুপম বড়ুয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯৪সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত সাত লক্ষ আশি হাজার টাকায় বারান্দা সহ তিনটি শ্রেণী কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ১/৩/৯৪ইংরেজী তারিখে বিদ্যালয়ের অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষক বাবু অমর নাথ পাল পদত্যাগ করে এবং বিদ্যালয়ের আরেক কৃতী প্রবীন শিক্ষক বাবু রবীন্দ্রলাল দাশ মহোদয় বিদ্যালয় হতে অবসর গ্রহণ করেন। বার হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সংস্কার সাধনের কাজ হাতে নেয়া হয় এবং প্রাথমিকভাবে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতে নিয়ে অডিটরিয়ামটি ভেঙে নূতন করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। শিক্ষার্থীদের বসবার আসন হিসেবে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ হতে পঞ্চাশ জোড়া উঁচু ও নীচু বেঞ্চের বরাদ্ধ পাওয়া যায়।
১৯৯৫ সালে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে নূতন অডিটরিয়াম নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং অতিরিক্ত আরো এক হাজার একশত পঁচিশ টাকা ব্যয়ে খেলার মাঠের সংস্কার সাধনের কাজটি সমাপ্ত করা হয়।
অধ্যক্ষ জনাব মোহাম্মদ ফেরদৌস চৌধুরীকে সভাপতি এবং বাবু মানবেন্দ্র বড়ুয়াকে সহ-সভাপতি মনোনীত করত ঃ ৭/১২/৯৬ইংরেজী তারিখে বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদ পুনগঠন করা হয়।
১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়কে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার জন্যে একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত রেভারেনড টি.এস ওয়াতানাবে বিদ্যালয়কে পনেরো হাজার টাকার একটি অনুদান প্রদান করেন।
ঐ অনুদান সহ সর্বমোট সাতাশ হাজার নয় শত সাতাশ টাকা ব্যয় বিদ্যালয়ের বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রী দীপক জ্যোতি মুৎসুদ্দী একমাসের জন্যে তীর্থ পরিভ্রমনে গেলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রী রাখাল চন্দ্র দে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষাক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা নুরুল হোসেন আনসারী ৩/৯/৯৭ ইংরেজী তারিখে বিদ্যালয় হতে পদত্যাগ করেন। তদস্থলে বর্তমানে কর্মরত ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা জনাব আবদুস চবুর কামিলকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাবু রূপম কিশোর বড়–য়া, আলহাজ্ব মোঃ নাজিম উদ্দিন, জনাব আবুল কালাম এবং আলহাজ্ব মোঃ শফি সাহেবের নিকট হইতে চাঁদা গ্রহণ করা হয়। অডিটোরিয়াম মঞ্চ রূপম বাবুর বাবা মা ফনীতটি নামে নামকরণ করা হয়। ১৯৯৮ এ সময়ে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ কর্তৃক দুটি স্যানিটারী টয়লেট নির্মিত হয় এবং বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী জনাব শামসুল আলম ইন্তেকাল করেন।
১৯৯৯ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারের জন্যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয়কল্পে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পরিদপ্তর থেকে চল্লিশ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের পরিমন্ডলে অর্থাৎ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে ডাকঘর স্থাপনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে বাবু শ্রী দীপক জ্যোতি মুৎসুদ্দীর বর্ধিত সময়ের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়ে গেলে সুকৃতী সম্পন্ন এ প্রধান শিক্ষক তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের ইতি টেনে বিদ্যালয় হতে অবসরে চলে যান। অতঃপর বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রী রাখাল চন্দ্র দে বি.কম, বি.এড ১/১২/৯৯ইংরেজী তারিখ হতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।অধ্যাপক বাবু শ্রী বিবেকানন্দ মুৎসুদ্দীকে সভাপতি এবং জনাব মোহাম্মদ আবুল কালামকে সহ-সভাপতি মনোনীত করতঃ তিনবছর মেয়াদের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়।
২০০০সালে বিদ্যালয়ের উর্দ্ধতন শিক্ষক বাবু শ্রী দয়াল হরি দে, ডায়াবেটিস জনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু বরণ করেন। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়ের পাঁচটি শ্রেণী কক্ষের ছাউনী বিধ্বস্ত হয়ে গেলে পুনরায় তা সংস্থাপন করা হয়। এ সময়ে বিদ্যালয় মেরামতের জন্যে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ হতে পঁচিশ হাজার টাকার একটি অনুদান পাওয়া যায়।
২০০১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত একুশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের চারটি শ্রেণী কক্ষের নির্মাণ কাজ হাতে নেয়।
২০০২ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম অধ্যাপক বিবেকানন্দ মুৎসুদ্দীর নেতৃত্বে পরিচালিত বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদ অনিবার্য কারণ বশতঃ অবলুপ্ত ঘোষনা করে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে রাউজান উপজেলার স্বনামধন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পাঁচসদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়।
এ সময় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে বাবু রাখাল চন্দ্র দে বি.কম, বি.এড সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ বাবু অঞ্জন বড়–য়া বি.এস.সি, বি.এড, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যথাক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে নিযোগ প্রাপ্ত হন।
অধ্যক্ষ জনাব মোহাম্মদ ফেরদৌস চৌধুরীকে সভাপতি এবং জনাব মোহাম্মদ আবুল কালামকে সহ-সভাপতি মনোনীত করতঃ তিন বছর মেয়াদের জন্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ পুণগঠন করা হয়। এ সময়ে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ হতে বিদ্যালয়ের জন্যে অনুদান হিসেবে পাঁচখানা টেবিল, পাঁচটি চেয়ার একটি স্টিল আলমারী পঞ্চাশ সেট হাই ও লো বেঞ্চ পাওয়া গিয়েছে।
২০০৩ সালে বিদ্যালয় হতে অবসরে চলে যাওয়া প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বাবু দীপক জ্যোতি মুৎসুদ্দীকে বিদ্যালয় হতে বিদায় অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয়। এ বিদায়ী সভায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বরেণ্য সমাজ সেবক, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বিদগ্ধ শিক্ষানুরাগী প্রাক্তন জেলা গর্ভনর লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫বি বাংলাদেশ বাবু রূপম কিশোর বড়ুয়া। দু’ দিনব্যাপী বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপনের জন্যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদ্যালয়,ব্যবস্থাপনা পরিষদ বিদ্যালয়ের প্রধান হিতৈষী প্রাক্তন জেলা গভর্নর, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫ বি ৪ বাংলাদেশ বাবু শ্রী রুপম কিশোর বড়ুয়া মহোদয়ের গর্বিত পিতা প্রয়াত বাবু শ্রী ফনি ভূষন বড়–য়ার স্মৃতিকে অমলিন করে ধরে রাখার প্রত্যয়ে বিদ্যালয়ে নব নির্মিত চারটি শ্রেনীকক্ষ ‘ফনী ভূষণ বড়–য়া’ স্মৃতি কক্ষ হিসেবে নামকরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
২০০৪ সালের ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ২দিন ব্যাপী বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উৎসাহ উদ্যাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্যে বিদ্যালয়কে নতুন করে সাজানো সহ উন্নয়নমুলক এক মহাপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে যার সফল বাস্তবায়নের জন্যে ‘শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন পর্যদ নামে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৯৯৩ সনে প্রকাশিত স্কুলের পূণর্মিলনী স্মরণিকা ‘সতীর্থ’ এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্টদের কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত-সচিব, সংকলন প্রকাশনা উপ-পরিষদ।
২০০৫সালে বিদ্যালয় মাঠের সংস্কার করা হয়। ২০০৫ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট শ্রেণী কক্ষ নির্মাণ করা হয়। যার নির্মাণ খরচ প্রায় আট লক্ষ টাকা তৎমধ্যে বিদ্যালয় পক্ষ হতে দুই লক্ষ টাকা অবশিষ্ট টাকা কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেডের সম্মানিত পরিচালক বাবু রূপম কিশোর বড়ুয়া প্রদান করেন। ভবনটি উদ্বোধন হয় ২৪/০৩/২০০৬ইং তারিখে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মহামান্য বিচারপতি জনাব খাদেমূল ইসলাম চৌধুরী। ২০০৬ ইং সনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিদ্যালয় মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য এক লক্ষ টাকা প্রদান করেন। উক্ত টাকা এবং বিদ্যালয় ফান্ড হতে প্রদত্ত টাকায় বিদ্যালয়ের সংস্কার সাধন করা হয়। ২০০৮ ইং সনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রাক্তন লায়ন গর্ভনর বাবু রূপম কিশোর বড়ুয়া ২০,০০০/- টাকা ব্যয়ে মাঠ সংস্কার করেন। ২০০৯ সালে বোর্ড কর্তৃক দুইটি ডেক্সটপ কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার বিদ্যালয়কে প্রদান করেন প্রাক্তন ছাত্র তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলি বাবু সত্যজিত চৌধুরী একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার প্রদান করেন। ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে কনফিডেন্স সিমেন্ট লিঃ পরিচালক বাবু রূপম কিশোর বড়–য়া নিযুক্ত হন। উনি আসার পরপরই বিদ্যালয়ে শিক্ষা সংস্কার ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ে রং জানলার গ্রীল স্থাপন, সীমানা প্রাচীরের এ্যাংগেল ও তারাকাঠা স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করেন।
২০১১ সালে বিদ্যালয় ফান্ড, ব্রাক এবং সভাপতি বাবু রূপম কিশোর বড়–য়ার সহযোগীতায় চারলক্ষ ছাব্বিশ হাজার পাঁচশত টাকা ব্যয়ে আধুনিক বাথরুম তৈরী, সম্পূর্ণ স্কুলে পানি সরবরাহ, নতুন, পুরাতন বাথরুমে টাইলস ফিটিং করা হয়। উক্ত বছর হতে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সভাপতি মহোদয় একজন ইংরেজী শিক্ষক, একজন মালী ও একজন নাইটগার্ড বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন। তাদের বেতন ভাতা সভাপতি মহোদয় প্রদান করেন। ২০১১ ইংরেজী সনে বিদ্যোৎসাহী সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু সরজিত বড়ুয়া মহোদয় নিজ খরচে একজন গণিত শিক্ষক নিয়োগ দান করেন। উক্ত সনে সিদ্ধান্ত করা হয় যে, সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ ও আগামী ২০১২সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টিফিন চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১২সালের ১লা জানুয়ারী হতে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে প্রতি মাসে ২০টাকা হিসাবে টিফিন খরচ সংগ্রহ করা হয় অবশিষ্ট টাকা সভাপতি রূপম কিশোরবড়ুয়া এবং বিদ্যেৎসাহী সদস্য সরজিত বড়ুয়া প্রদান করেন। এ সালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আমেরিকা প্রবাসী মোঃ আলাউদ্দীন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর সহযোগীতায় ডি-নেটের মাধ্যমে ৫টি ল্যাপটপ একটি খ.ঈ.উ টিভি প্রিন্টার সোলার সহ ইত্যাদি প্রদান করা হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাদের কাছে ঋণী উনারা হলেন প্রয়াত শ্রী জয়লাল বড়ুয়া, গগন চন্দ্র বড়ুয়া, দক্ষিনা রঞ্জন মুৎসুদ্দী, অধীর লাল বড়ুয়া, মোহন চন্দ্র বড়ুয়া, হর গোবিন্দ মুৎসুদ্দী, সতীশ চন্দ্র বড়ুয়া, হরকিশোর বড়ুয়া, বীরেন্দ্র লাল মুৎসুদ্দী, উমেশ চন্দ্র মুৎসুদ্দী, কালী কিংকর মুৎস্দ্দুী, মহিমা রঞ্জন বড়ুয়া, রমেশ চন্দ্র সেন, রেবতি রমন বড়ুয়া, রজনি কান্ত সেন, জমিদার হেদায়েত আলী চৌধুরী, মাওলানা আমির আলী, ভগিরত চন্দ্র বড়ুয়া, গোবিন্দ চন্দ্র বড়ুয়া, মুন্সি মফজল আহম্মদ চৌধুরী, সচীন্দ্র নাথ মুৎসুদ্দী, যামিনী কান্ত সেন, ইদ্রিস আহম্মদ চৌধুরী, ফিরোজ আহম্মদ চৌধুরী, জ্যোতিময় বড়ুয়া, সহ আরও অনেক মনিষি।